ওয়ারেন, ২০ সেপ্টেম্বর : আজ শুভ মহালয়া। হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গপূজার ক্ষণ গণনা শুরু। মহালয়ার ৬ দিন পরই আসে মহাসপ্তমি। শ্রীশ্রী চন্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার আবাহনই মহালয়া হিসেবে পরিচিত। আর এই চন্ডী’তেই আছে দেবী দুর্গার সৃষ্টির বর্ণনা এবং দেবীর প্রশস্তি। আজ পিতৃপক্ষের অবসানে সূচনা ঘটছে দেবীপক্ষের। শারদীয় দুর্গাপূজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ এই মহালয়া।
আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের অবসান ও দেবীপক্ষের সূচনায় যে অমাবস্যা আসে, তাই মহালয়া। আর এই দিনটি হচ্ছে পিতৃপূজা ও মাতৃপূজার সন্ধিলগ্ন। শাস্ত্র অনুযায়ী মহালয়া হচ্ছে পূজা বা উৎসবের আলয় বা আশ্রয়। অন্যদিকে মহালয়া বলতে ‘পিতৃলোক’কেও বোঝায়, যেখানে বিদেহী পিতৃপুরুষ অবস্থান করছেন। পিতৃপক্ষের অবসানে, অমাবস্যার সীমানা ডিঙ্গিয়ে আলোকময় দেবীপক্ষের আগমনের মহালগ্নটি মহালয়ার বার্তা বহন করে আনে। এক্ষেত্রে স্বয়ং দেবীই হচ্ছেন সেই মহান আশ্রয়। তাই উত্তরণের লগ্নটির নাম মহালয়া। সনাতন ধর্মে কোন শুভ কাজ করতে গেলে প্রয়াত পূর্বজসহ সমগ্র জীবজগতের জন্য তর্পণ করতে হয়। তর্পণ মানে হলো খুশি করা। সাধারণভাবে মৃত পূর্বপুরুষগণকে জলদান করাকেই তর্পণ বলা হয়।
গত দুই সপ্তাহ ধরে চলছিল পিতৃতর্পণ। মহালয়ায় তর্পণ-শ্রাদ্ধ করলে পিতৃপুরূষরা আশীর্বাদ করেন বলে মনে করা হয়। আবার তর্পণের দিন পর্যন্ত কৃত্যপাপ তৎক্ষণাৎ বিনষ্ট হয় বলেও কথিত আছে। পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন সহ তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা এই দিনটির বিশেষত্ব। মহালয়ার অমাবস্যায় বা সর্বপিতৃ অমাবস্যায় পিতৃপক্ষের সমাপন এবং মাতৃপক্ষের সূচনা হবে। লােক বিশ্বাস, কৈলাস থেকে দেবী দুর্গা নাকি মহালয়া থেকে বাপের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কাজেই মহালয়া তিথিটি বিশেষ স্থান অধিকার করে নিয়েছে দুর্গা পুজাের ক্ষেত্রে। শাস্ত্রমতে দেবীদুর্গা মহিষাসুর নিধনের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন এই মহালয়া তিথিতে। মহালয়ায় দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয়। বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে মহিষাসুরমর্দিনী দেবী দুর্গা সমস্ত অশুভ শক্তি বিনাশের প্রতীক রূপে পূজিত হন তিনি।
বিশ্বজুড়ে দেবী দুর্গার আগমনী বার্তায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। মহালয়া এলেই দেবী বন্দনার সুর ধ্বনিত হয়। দূর থেকে ভেসে আসে ঢাকের আওয়াজ। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে পাঁচ দিনের মহাধুমধামপূর্ণ দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। এবছর দেবী দুর্গার আগমন ‘গজে’, যার অর্থ বসুন্ধরা শস্যশ্যামলা হয়ে উঠবে, পৃথিবীতে সমৃদ্ধি আসবে। তবে গমন ‘দোলায়’, যা মহামারী বা মড়কের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। ফলে বলা যায়—আগমন যেখানে মঙ্গলবার্তা বহন করছে, সেখানে গমন রেখে যাচ্ছে অশুভ ইঙ্গিত।
এদিকে শুভ মহালয়া উপলক্ষে গতকাল শনিবার ওয়ারেন সিটির শিব মন্দির টেম্পল অব জয় এবং মিশিগান কালিবাড়িতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসব আয়োজনের মধ্যে ছিল চণ্ডীপাঠ, চণ্ডীপূজা, আবাহন সংগীত, মেলা, ভক্তিমূলক গান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
পূজা শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে এবার যুক্তরাষ্ট্রে উপস্থিত হয়েছেন বাংলাদেশ ও ভারতের একঝাঁক জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী। মিশিগানের শ্রোতাদের মাতাতে আসছেন মহুয়া বানার্জি, অভকি দেব, স্নেহা ভট্টাচার্য, আলবার্ট কাবো, রথিজিৎ ভট্টাচার্য, শ্রেয়া ভট্টাচার্য, জয় সরকার ও লোপামুদ্রাসহ আরও অনেকে। তাঁদের পরিবেশনায় শারদীয় উৎসব পাবে অন্যরকম মাত্রা।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan